স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এমএ বেবি। রবিবার মাদুরাইয়ে সিপিআই(এম) ২৪তম সম্মেলনের মঞ্চ থেকে নির্বাচিত ৮৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়েছে।
১৮ সদস্যের পলিট ব্যুরো নির্বাচিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, অমরা রাম, বিজু কৃষ্ণন, মারিয়াম ধাওয়ালে, ইউ বাসুকি, কে বালাকৃষ্ণন, জিতেন্দ্র চৌধুরী, আর অরুণকুমার এই পার্টি কংগ্রেস থেকে পলিট ব্যুরোয় প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে মহিলার সদস্যের অংশ ১৭ শতাংশ থেকে বেড়ে এবার হয়েছে ২০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গের মীনাক্ষী মুখার্জি, কনীনিকা ঘোষ, দেবব্রত ঘোষ, সৈয়দ হোসেন, সমন পাঠক নবনির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার নবনির্বাচিত সদস্যের সংখ্যা মোট ৩১। একজনকে পরে নির্বাচিত করা হবে।
বয়সসীমার কারণে ২৪তম পার্টি কংগ্রেস থেকে প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্ব বিদায় নিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে থাকাকালীন প্রয়াত হন সীতারাম ইয়েচুরি। সেই সময় পলিট ব্যুরো কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রকাশ কারাত। তাঁর সঙ্গে আগের পলিট ব্যুরোর সাত সদস্যকে বিদায় দিতে হয়েছে।
পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে এ প্রসঙ্গে বেবি বলেছেন, কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু পার্টির সব স্তরে নবীন নেতৃত্বকে তুলে আনার অবস্থান থেকে আমরা সরতে চাইনি।
বেবি বলেছেন, নয়া ফ্যাসিবাদী চরিত্রের শক্তিকে মদত দিচ্ছে দেশের শাসক শ্রেণি। একদিকে গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর প্রবল আঘাত। আরেকদিকে জীবনজীবিকার ওপরও নেমেছে মারাত্মক আক্রমণ। নয়া উদারবাদ এবং সাম্প্রদায়িক কর্পোরেট হিন্দুত্ববাদ- দুয়ের বিরুদ্ধেই লড়তে হবে। তার জন্য দরকার বামপন্থী শক্তির বিকাশ। বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির ঐক্যকে মজবুত করেই এই বিকাশ প্রয়োজন। অত্যন্ত জরুরি সিপিআই(এম)’র স্বাধীন বিকাশও।
বেবি বলেন, পার্টি কংগ্রেসের অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় সমালোচনা এবং আত্ম সমালোচনা হয়েছে। পলিট ব্যুরোর ভূমিকার মূল্যায়ন করেছেন প্রতিনিধিরা। এই মতবিনিময় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী করার জন্যই অত্যন্ত প্রয়োজনের। দেশের শ্রমজীবী কৃষিজীবির বিপুল অংশকে এখন শাসক শ্রেণির প্রতিনিধি রাজনৈতিক শক্তি আকর্ষণ করতে পারছে। কেন আমরা এই অংশকে নিজেদের দিকে টেনে আনতে পারব না, তা নিয়ে হয়েছে আলোচনা। আগামী দিনে চলার দিশা স্থির করেছে পার্টি কংগ্রেস। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি এই লক্ষ্যেই এগবে।
রবিবারই মাদুরাইয়ের রিঙ রোডে হবে বিশাল সমাবেশ। পার্টি কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে শহরের নামকরণ করা হয় সীতারাম ইয়েচুরির নামে। তাঁর প্রয়ানে শূন্যতার পরিস্থিতিও এদিন সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন বেবি। বিকেলে সমাবেশে প্যারেড করে আসবেন প্রায় ২৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। তামিলনাডুর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কুচকাওয়াজ করে এসেছে। হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
কমরেড এম এ বেবি:
১৯৫৪ সালের ৫ এপ্রিল কেরালার কোল্লাম জেলার প্রাক্কুলামে পিএম আলেকজান্ডার এবং লিলি আলেকজান্ডারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন এমএ বেবি । বেবি প্রাক্কুলাম নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রাক্কুলাম এনএসএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন। উচ্চ বিদ্যালয়ের সময় থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে প্রথম পরিচিত হন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর, বেবি কোল্লামের এসএন কলেজে প্রি-ডিগ্রি (প্লাস টু) পড়ার জন্য যান। পরে, বেবি এসএন কলেজেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন । তবে, তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি।
তিনি বেটি লুইসের সাথে বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে অশোক বেটি নেলসন রয়েছে।
কোল্লাম জেলার প্রাক্কুলামের এনএসএস হাই স্কুলে পড়ার সময় এম এ বেবি কেরালা স্টুডেন্টস ফেডারেশনে যোগ দেন, যা স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পূর্বসূরী । তিনি স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া, ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া , কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) -এ অনেক দায়িত্বশীল পদে দায়িত্ব পালন করেছেন । বর্তমানে তিনি সিপিআই(এম)-এর পলিটব্যুরো সদস্য।
তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৬-২০১১ সময়কালে তিনি কেরালার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
২০১৪ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে তিনি কোল্লাম থেকে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দলের এন কে প্রেমাচন্দ্রনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যর্থ হন । ২০২৫ সালের ৬ এপ্রিল মাদুরাইতে অনুষ্ঠিত ২৪ তম পার্টি কংগ্রেস থেকে তিনি সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।