স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন প্রতিবেদক।।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা বলছেন, তিনি এবং অর্থনীতি বেশ চাপে আছেন। তাঁদের অনুপযুক্ততার কথা বললে জাতির ভাবমূর্তি ক্ষতি হয়। কথাটা অনেকাংশেই সত্যি। কিন্তু সত্য কঠিন হলেও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ বাজেট গরীববান্ধব বাজেট হচ্ছে না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দের খাত ১৪০-৪৫ থেকে ১০০ তে নামিয়ে আনা হবে এবং এখানে ৫০-১০০ টাকা ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। যুক্তি হলো, বরাদ্দের গুণগত মান বাড়ানো। আসলে আইএমএফের শর্ত, সামাজিক খাতে ভর্তুকি কমানো। এই কোপ গিয়ে পড়ছে সমাজের প্রান্তিক নারী পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের গায়ে। মূল্যস্ফীতির এই বাজারে তার প্রভাব পড়বে নেতিবাচক। কারণ, বিশ্বব্যাঙ্কের ধারণা, আগামীতে তিরিশ লক্ষ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যেতে পারে। এতে দারিদ্র্য মিউজিয়ামের সামাজিক আয়তন বেড়েই চলবে।
এছাড়াও, সামনে কুরবানির ঈদ। একজন ব্যবসায়ী নেতা বলছেন, দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ ঘাটতির কারণে বেশ কিছু কারখানা কুরবানির আগে ও পরে কুরবানী হয়ে যাবে। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য শুল্ক ও অ- শুল্ক জনিত যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকটের মুখোমুখি। আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত ডলার নেই। আইএমএফের শর্তে ডলার ব্যবসা খোলা বাজারে ছেড়ে দিলেও বাংলাদেশের বাজার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই উদ্যোগ সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই। এসবের মধ্যে সুখবর শুধু রেমিট্যান্স এর প্রবাহ ভালো।
আমাদের বাজেট অর্থনীতির একটা বাৎসরিক কার্যক্রম। এতে কিছু ভালো মন্দের চিত্র আসে কিন্তু রাজনৈতিক অর্থনীতির চিত্র আরও খারাপ ; কারণ সামনে যদি নির্বাচন হয় তার ঢোল বেজে উঠে তবে বাজেট অনেক সংকটে পড়বে।
একথা সত্যি যে, এবারের বাজেট রাজনৈতিক জনতুষ্টির বাজেট নয় কিন্তু আইএমএফ তুষ্টির খেসারত জনগণকে দিতে হবে। এই বাজেটে দুটো বিষয় কমছে, একটা হলো কাজের সুযোগ তৈরির প্রকল্প বা নীতি নেই অন্য দিকে কৃষি সহ অন্য সামাজিক খাতে ভর্তুকি কমবে।
পেশাদার অর্থনীতিবিদগন ব্যাংক থাকে। কিছু দিন আগে, আইএমএফের ঋণের কিস্তি ছাড়ের জন্য তাঁকে বেশ কিছু তিতা গিলতে হয়েছে। মধ্য রাতে এনবিআর ভেঙে দুভাগ করার পর কর্মকর্তা কর্মচারিদের আন্দোলনের ফলে সরকারকে পিছু হাঁটতে হচ্ছে : অথচ, এনবিআর বাজেট বাস্তবায়নের অন্যতম বড় অঙ্গ। শ্যাম রাখি না কূল রাখি। আইএমএফ ও এনবিআরের টানাটানি সত্যিই অর্থ উপদেষ্টাকে চাপে ফেলে দিয়েছে। আরও চাপ আছে ; বিশ্বব্যাঙ্ক বলেছে, প্রবৃদ্ধির হার ৩.৩ এর বেশি হবে না। এই সতর্ক বাণির মধ্যেও খারাপ খবর হলো, বাজেটের আকার এবার ছোট হবে। কাটা পড়বে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ। ফলে একথা শুরুতেই বলা চলে, এবারের খাতের অনিয়ম, টাকা পাচার ও সুশাসনের কথা বলছেন। এগুলো যৌক্তিক। বৃহৎ প্রকল্পের অনিয়মের কথা বলছেন, এগুলোও যৌক্তিক। কিন্তু বাজেট দর্শনের বড় কথা হলো, সামাজিক বিনিয়োগ, কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা যা অর্থনীতির জনবান্ধবতার কথা বলে। রাজনৈতিক বাজেট এগুলো স্বীকার করে, অরাজনৈতিক বাজেট অধিকতর নীতির কথা বললেও জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদাকে পাশ কাটিয়ে রাখে।
আমাদের রাজনীতি এখন টালমাটাল ; এর প্রভাব অর্থনীতিকেও অস্থির ও দুড়বল করছে। এই রাজনৈতিক সামাজিক ও ব্যবসায়িক অস্থিরতা বাজেটকে প্রভাবিত করলে শেষ বিচারে জনগণই চাপে পড়ে। আমাদের কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত এই চাপ সামলাতে কোমর ভেঙে যায় কীনা তা ভাবার বিষয় ; তাই বলা চলে অর্থ উপদেষ্টা এই সামগ্রিক বাজেটিয় চাপ জনগণের মাথায়ই ঠেলে দেন কীনা। কারণ জনগণ সর্বংসহা।
শামসির শরিফ