স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:
রগকাটা থেকে গলাকাটা
=================
ছাত্রসংঘ থেকে ছাত্রশিবিরে রূপান্তরিত এই সংগঠন সব সময়ই বর্বর হত্যাকা- চালিয়ে আসছে। দেশে টার্গেট কিলিং বা গুপ্ত হত্যা বন্ধ করাই হচ্ছে এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের কিন্তু এই টার্গেট কিলিং বা গুপ্ত হত্যা চালাচ্ছে কারা? জামায়াত-শিবিরের রগ কাটার সহিংস সন্ত্রাসী রাজনীতি থেকে জন্ম নেয়া গলা কাটার রাজনীতিই এখন টার্গেট কিলিং বা গুপ্ত হত্যাকা- ঘটানো হচ্ছে, যা দিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠন দমনে তারা শুরু করে রগ কাটার সহিংস সন্ত্রাসী রাজনীতি। জামায়াত-শিবির টার্গেট কিলিং নামের এই সহিংস সন্ত্রাসী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে জঙ্গী গোষ্ঠীকে। আর এ জন্য তারা সহায়তা পাচ্ছে জোটের রাজনীতির সহযোগী দল বিএনপি ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা ইসরায়েলের মোসাদ ও পাকিস্তানের আইএসআই। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দাখিল করা প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্যের কথা উল্লেখ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে,
*১৯৮১ সাল থেকে গত ৪৪ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো দমনে রগকাটার সহিংস সন্ত্রাসী রাজনীতি করে আসছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবির।
*২০১১ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধীর বিচারে বাধা ও রায় বানচাল করতে তারাই শুরু করে রগকাটা থেকে গলাকাটার সহিংস সন্ত্রাসী রাজনীতির সূচনা। মূলত যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ স্থাপিত হওয়ার পর ব্লগার প্রকৌশলী আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে পল্লবী নিজ বাড়ির সামনে শিবিরের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে শিবিরের গলাকাটার রাজনীতিতে যুক্ত করে জঙ্গী গোষ্ঠীকে। এই গুপ্ত হত্যার নির্দেশদাতা ছিল জামায়াতের এক নেতা, যার নাম রানা বলে পরিচিত। এই হত্যাকান্ডের অন্যতম নেতা ফারাবি যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতা। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত বছরগুলো ধরে এখন কুপিয়ে হত্যার টার্গেট কিলিং বা গুপ্ত হত্যা অব্যাহত আছে।
রগকাটা শিবিরের গলাকাটা ইতিহাস॥
———————————————
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাক হানাদারদের যারা সহযোগিতা করত সেই জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংস্থার নাম ছিল ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’।
*১৯৭৭ সালে পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তারা ইসলামী ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে। বর্বরোচিত সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর জন্য সর্বস্তরে নিন্দিত জামায়াতে ইসলামীর এই ছাত্র সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় জবাই করে হত্যার রাজনীতি শুরু করে চট্টগ্রাম থেকে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে হামলা-সহিংসতা-সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। তবে এক্ষেত্রে অপরাপর ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে শিবিরের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। শিবির সরাসরি হত্যার মিশনে নামে। তাছাড়া এরা যাকে আঘাত করে তাকে চিরতরে পঙ্গু-অচল করে দেয়। এর মাধ্যমে তারা সংশ্লিষ্ট কর্মীটিকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার এবং অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের সাবধান করে। এজন্য শিবিরের নৃশংসতার সাথে অন্য কারও তুলনা হয় না। হাতুড়ি, রড, ইট, মুগুর দিয়ে হাড় গুঁড়ো করে দেয়া, রিকশার স্পোক কানের ভেতর ঢুকিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মগজ বের করে আনা, হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়া, চোখ উপড়ে ফেলা, মেরুদ- ভেঙ্গে ফেলা, কব্জি কেটে নেয়া, কিরিচ, ছোরা, কুড়াল ব্যবহার করে হত্যা করার মতো নৃশংসতা এদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কেবল শিবিরের নামের সাথেই যুক্ত, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ‘৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-সহ রাজাকার, আলবদর আল সামস গঠন করে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকা-ের সূচনা করে। জামায়াতের সেই নির্মম ও নৃশংস হত্যাকা-ের রাজনীতিরই উত্তরাধিকার হিসাবে গ্রহণ করেছে তাদের ছাত্র সংগঠন শিবির।
পেছনে ফিরে তাকানো যাক শিবিরের বর্বরতার দিকে ॥
(চলবে)
হাফিজ সরকার
সাবেক ছাত্র নেতা,
লেখক ও কলামিস্ট
তথ্যসুত্রঃ
১) গোয়েন্দা প্রতিবেদন-দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।
২) শংকর কুমার দের গবেষণা প্রতিবেদন।
৩) ২রা জুন ১৯৮৮ দৈনিক সংবাদে জামিল হত্যার প্রতিবাদে, বিভিন্ন বিভিন্ন কর্মসুচির শেষে প্রকাশিত হয় সেই বিবৃতি।