স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:
জীবনের জন্য
ডায়াবেটিসকে
নিয়ন্ত্রণ করুন।
আধুনিক যুগে ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বর্তমানে পৃথিবীর শতকরা ২ থেকে ৫ ভাগ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বহুদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগলে সুদূরপ্রসারী জটিলতা দেখা দিতে পারে। রেটিনোপ্যাথির কারণে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। তাছাড়া চোখে রক্তপাত, পুঁজ জমা, অন্ধত্ব এবং গ্লকোমা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস থেকে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ না করলে তা আপনার আয়ুকে কমিয়ে দিয়ে হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুদূত। শুধু মাত্র ওষুধ দিয়ে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। জীবনশৈলীর বিভিন্ন পরিবর্তন এবং তার শৃঙ্খলায়নই পারে এই মারণ ব্যাধির ক্ষতি থেকে আমাদের বাঁচাতে।
ডায়াবেটিস – সুস্থতার সন্ধানে
বেশ কিছুদিন আগেকার কথা। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চাল থেকে আসা এক ভদ্রমহিলা দিনমজুর, ধান-চাতালে কাজ করেন। বয়স ৩৮, ওজন মাত্র ৪০ কেজি। ঘন ঘন জল খাচ্ছিলেন ও অস্থিরভাবে শুয়ে পড়ছিলেন, আবার উঠে বসছিলেন। আমার সহকারি বিষয়টা জানালে, আমি তৎক্ষণাৎ তাকে পরীক্ষা করে দেখি এবং সন্দেহ হওয়ায় গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্তের সুগারটা পরীক্ষা করি। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক ৫৬৯ মিগ্রা/ডিএল। ভুল হতে পারে ভেবে আবার পরীক্ষা করি এবং যান্ত্রিক ত্রুটি এড়াতে ও নিশ্চিত হবার জন্য কাছাকাছি একটা ল্যাবোরেটারিতে একই রক্তের নমুনা পাঠাই। সে রিপোর্টও প্রথমটার প্রায় কাছাকাছি। অথচ এই মহিলা এর আগে রক্তে তো দূরের কথা শরীরের কোন সমস্যার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হননি। বেধান-চাতাল
ভদ্রমহিলা ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন অথচ জানতেন না। শুধু উনি কেন অনেকেই আছেন অন্য কোন সমস্যার জন্য ডাক্তারের কাছে এলে নেহাতই রুটিন মাফিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। শুরুতেই ডায়াবেটিস যেহেতু ভয়ঙ্কর কোন কষ্ট দেয় না আমরা অনেকেই একে বিশেষ গুরত্ব দিনা। অথচ যত তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করা যায় রুগীর আয়ুষ্কাল ততই দীর্ঘায়িত করা সম্ভব।
ভয়াবহতা
ডায়বেটিস, বহুমূত্র বা মধুমেহ যে নামেই বলি না কেন এটা যে দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পরছে তা এক কথায় এপিডেমিক। এবং এর সঙ্গে হৃদরোগ ধরলে যা কিনা ডায়াবেটিসের দোসর হিসাবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত এই দু’য়ে মিলে পৃথিবী জুরে সমস্ত মৃত্যুর কারণের সিংহভাগই অধিকার করে আছে। প্রতি তিনজন ডায়াবেটিস রুগীর মধ্যে দু’জন মারা যায় হৃদরোগে। এদের মধ্যে শতকরা ২০ জনের কোনও উপসর্গ ছাড়াই নিঃশব্দে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৩৮ জন উচ্চ রক্তচাপ, ২৩ জনের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি), ২৭ জনের নার্ভের জটিলতা ও ৫ শতাংশ কিডনির সমস্যায় ভোগেন। এর ভয়াবহতা এবং সুদূর প্রসারী জটিলতা একে সাইলেন্ট কিলার বা নিঃশব্দ মৃত্যুদূত বলে অভিহিত করেছে। আজ সমস্ত চিকিৎসক সমাজের কাছে এ এক বড় চ্যালেঞ্জ।
আমাদের দেশে
আমাদের দেশের কিংবদন্তি চিকিৎসক শুশ্রুত পাঁচ ও ছয় শতকের মাঝামাঝি এই রোগের বর্ণনা দিয়ে গেছেন। সারা পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ কোটি যা কিনা ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ভারতের চিত্রটি আরও করুন। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি এবং ২০২৫ সালে তা আনুমানিক ৫.৭ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে শতকরা। এবং শহরে শতকরা ১২-১৮ জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে আমাদের দেশেকে বলা হয় বিশ্ব ডায়বেটিসের রাজধানী।
কি এবং কেন ক্ষতিকারক
ডায়াবেটিস হচ্ছে এমন অবস্থা, যেখানে দেহ যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা সেই ইনসুলিন যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে পারে না। আমাদের পেটের মধ্যে প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয় বলে একটি অঙ্গ আছে। সেখান থেকে ইনসুলিন বলে একটি রাসায়নিক নিঃসৃত হয়। এই ইনসুলিন হরমোন শরীরের কোষের মধ্যে গ্লুকোজ প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। আমরা জানি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এই গ্লুকোজ কতটা জরুরি। এটি আমাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির প্রধান উৎস। গ্লুকোজ যদি কোষে প্রবেশ করতে না পারে অর্থাৎ কারও শরীরে যদি ইনসুলিনের ঘাটতি দেখা যায় তবে উদ্বৃত্ত গ্লুকোজ শরীরের মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই অবস্থার নাম হাইপারগ্লাইসিমিয়া বা ডায়াবেটিস, যা অচিরেই দৃষ্টিশক্তি হ্রাস করে এবং হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা কমায়, নার্ভ ও কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
রসে বসে থাকা
যত দিন যাচ্ছে মানুষ তত কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছে। একরকম অলসতা ছেয়ে গেছে আমাদের দেহে মনে। তারমধ্যে আরামের এত উপকরণ ছড়িয়ে আছে যে কি কর্মক্ষেত্রে, কি বাড়িতে শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন পরে না। তার সঙ্গে সমানতালে বাড়ছে রেডিমেড খাবারের জনপ্রিয়তা। এই সব ফাস্টফুডে লুকানো ফ্যাট এবং কর্মবিমুখতার জন্য দেহে সঞ্চিত উদ্বৃত্ত ফ্যাট এই দু’য়ে মিলে আমারা হয়ে যাচ্ছি স্কুল। ওজন বৃদ্ধির সাথে মধ্যপ্রদেশ স্ফীত হচ্ছে সমান তালে। বাড়ছে রক্তচাপ, বাড়ছে কোলেস্টেরলের মাত্রা। এসবের মিলিত পরিনামই অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক। নতুন চিন্তাধারায় এই রোগগুলিকে একত্রে বলা হয় মেটাবলিক সিন্ড্রোম।
রোগনির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণ রেখা
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খালি পেটে ১২৬ মি.গ্রা. (126 mg) বা পরিপূর্ণ আহারের ২ঘন্টা পরে ২০০ মি.গ্রা. (200 mg) এর বেশি হলে তার ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া খালি পেটে গ্লুকোজের মাত্রা ১১০মি.গ্রা (110mg) থেকে ১২৬ মি.গ্রা. (126mg) এর মধ্যে এবং আহারের পরে ১৪০ মি.গ্রা.থেকে ২০০ এর মধ্যে (140mg to 200 mg) হলে তাকে প্রাক ডায়াবেটিস বলে যা কিনা পরবর্তীকালে পূর্ণাঙ্গ ডায়াবেটিস রূপে দেখা দিতে পারে। ভারতবর্ষে প্রাক ডায়াবেটিস রুগীর সংখ্যাও বিপজ্জনক। শহরাঞ্চলে শতকরা ৮.৭ এবং গ্রামাঞ্চলে ৭.৪ শতাংশ আক্রান্ত। পূর্ণাঙ্গ ডায়াবেটিসের সঙ্গে এই বিপুল সংখ্যক প্রাক ডায়াবেটিস ধরলে সহজেই আনুমেয় বর্তমানে আমরা কোথায় আছি। এতো গেলো প্রথমবারের রোগ নির্ণয় এর কথা। কিন্তু আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা জানতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ২-৩ মাস পরপর রক্ত পরীক্ষা বাঞ্ছনীয়। ডায়াবেটিস কখনও সারে না, এ কথা মাথায় রেখেই একে নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর বা গুরুত্ব দিতে হবে। খালিপেটে ৯০ মি.গ্রা থেকে ১১০ মি.গ্রাএর মধ্যে এবং আহারের পরে ১১০ মি.গ্রা. থেকে ১৪০ মি.গ্রা. এর মধ্যে (বয়স্কদের ক্ষেত্রে <180 মি.গ্রা. এর কম) থাকলে ডায়াবেটিস খুব ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া বছরে ৪ বার রক্তে Hb A1c বলে একটা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এটা আরও বেশী কার্যকর পরীক্ষা এবং রক্তের সুগারের বিগত তিন মাসের গড় অবস্থা সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে। Hb A1cএর মাত্রা রক্তে ৬.৫-৭ শতাংশের নীচে থাকলে তার ডায়াবেটিস ভাল নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করা যেতে পারে।
আধুনিক যুগে ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বর্তমানে পৃথিবীর শতকরা ২ থেকে ৫ ভাগ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বহুদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগলে সুদূরপ্রসারী জটিলতা দেখা দিতে পারে। রেটিনোপ্যাথির কারণে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। তাছাড়া চোখে রক্তপাত, পুঁজ জমা, অন্ধত্ব এবং গ্লকোমা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস থেকে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ না করলে তা আপনার আয়ুকে কমিয়ে দিয়ে হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুদূত। শুধু মাত্র ওষুধ দিয়ে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। জীবনশৈলীর বিভিন্ন পরিবর্তন এবং তার শৃঙ্খলায়নই পারে এই মারণ ব্যাধির ক্ষতি থেকে আমাদের বাঁচাতে।
ডায়াবেটিস – সুস্থতার সন্ধানে
বেশ কিছুদিন আগেকার কথা। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চাল থেকে আসা এক ভদ্রমহিলা দিনমজুর, ধান-চাতালে কাজ করেন। বয়স ৩৮, ওজন মাত্র ৪০ কেজি। ঘন ঘন জল খাচ্ছিলেন ও অস্থিরভাবে শুয়ে পড়ছিলেন, আবার উঠে বসছিলেন। আমার সহকারি বিষয়টা জানালে, আমি তৎক্ষণাৎ তাকে পরীক্ষা করে দেখি এবং সন্দেহ হওয়ায় গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্তের সুগারটা পরীক্ষা করি। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক ৫৬৯ মিগ্রা/ডিএল। ভুল হতে পারে ভেবে আবার পরীক্ষা করি এবং যান্ত্রিক ত্রুটি এড়াতে ও নিশ্চিত হবার জন্য কাছাকাছি একটা ল্যাবোরেটারিতে একই রক্তের নমুনা পাঠাই। সে রিপোর্টও প্রথমটার প্রায় কাছাকাছি। অথচ এই মহিলা এর আগে রক্তে তো দূরের কথা শরীরের কোন সমস্যার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হননি। বেধান-চাতাল
ভদ্রমহিলা ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন অথচ জানতেন না। শুধু উনি কেন অনেকেই আছেন অন্য কোন সমস্যার জন্য ডাক্তারের কাছে এলে নেহাতই রুটিন মাফিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। শুরুতেই ডায়াবেটিস যেহেতু ভয়ঙ্কর কোন কষ্ট দেয় না আমরা অনেকেই একে বিশেষ গুরত্ব দিনা। অথচ যত তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করা যায় রুগীর আয়ুষ্কাল ততই দীর্ঘায়িত করা সম্ভব।
ভয়াবহতা
ডায়বেটিস, বহুমূত্র বা মধুমেহ যে নামেই বলি না কেন এটা যে দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পরছে তা এক কথায় এপিডেমিক। এবং এর সঙ্গে হৃদরোগ ধরলে যা কিনা ডায়াবেটিসের দোসর হিসাবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত এই দু’য়ে মিলে পৃথিবী জুরে সমস্ত মৃত্যুর কারণের সিংহভাগই অধিকার করে আছে। প্রতি তিনজন ডায়াবেটিস রুগীর মধ্যে দু’জন মারা যায় হৃদরোগে। এদের মধ্যে শতকরা ২০ জনের কোনও উপসর্গ ছাড়াই নিঃশব্দে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৩৮ জন উচ্চ রক্তচাপ, ২৩ জনের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি), ২৭ জনের নার্ভের জটিলতা ও ৫ শতাংশ কিডনির সমস্যায় ভোগেন। এর ভয়াবহতা এবং সুদূর প্রসারী জটিলতা একে সাইলেন্ট কিলার বা নিঃশব্দ মৃত্যুদূত বলে অভিহিত করেছে। আজ সমস্ত চিকিৎসক সমাজের কাছে এ এক বড় চ্যালেঞ্জ।
আমাদের দেশে
আমাদের দেশের কিংবদন্তি চিকিৎসক শুশ্রুত পাঁচ ও ছয় শতকের মাঝামাঝি এই রোগের বর্ণনা দিয়ে গেছেন। সারা পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ কোটি যা কিনা ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ভারতের চিত্রটি আরও করুন। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি এবং ২০২৫ সালে তা আনুমানিক ৫.৭ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে শতকরা। এবং শহরে শতকরা ১২-১৮ জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে আমাদের দেশেকে বলা হয় বিশ্ব ডায়বেটিসের রাজধানী।
কি এবং কেন ক্ষতিকারক
ডায়াবেটিস হচ্ছে এমন অবস্থা, যেখানে দেহ যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা সেই ইনসুলিন যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে পারে না। আমাদের পেটের মধ্যে প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয় বলে একটি অঙ্গ আছে। সেখান থেকে ইনসুলিন বলে একটি রাসায়নিক নিঃসৃত হয়। এই ইনসুলিন হরমোন শরীরের কোষের মধ্যে গ্লুকোজ প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। আমরা জানি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এই গ্লুকোজ কতটা জরুরি। এটি আমাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির প্রধান উৎস। গ্লুকোজ যদি কোষে প্রবেশ করতে না পারে অর্থাৎ কারও শরীরে যদি ইনসুলিনের ঘাটতি দেখা যায় তবে উদ্বৃত্ত গ্লুকোজ শরীরের মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই অবস্থার নাম হাইপারগ্লাইসিমিয়া বা ডায়াবেটিস, যা অচিরেই দৃষ্টিশক্তি হ্রাস করে এবং হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা কমায়, নার্ভ ও কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
রসে বসে থাকা
যত দিন যাচ্ছে মানুষ তত কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছে। একরকম অলসতা ছেয়ে গেছে আমাদের দেহে মনে। তারমধ্যে আরামের এত উপকরণ ছড়িয়ে আছে যে কি কর্মক্ষেত্রে, কি বাড়িতে শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন পরে না। তার সঙ্গে সমানতালে বাড়ছে রেডিমেড খাবারের জনপ্রিয়তা। এই সব ফাস্টফুডে লুকানো ফ্যাট এবং কর্মবিমুখতার জন্য দেহে সঞ্চিত উদ্বৃত্ত ফ্যাট এই দু’য়ে মিলে আমারা হয়ে যাচ্ছি স্কুল। ওজন বৃদ্ধির সাথে মধ্যপ্রদেশ স্ফীত হচ্ছে সমান তালে। বাড়ছে রক্তচাপ, বাড়ছে কোলেস্টেরলের মাত্রা। এসবের মিলিত পরিনামই অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক। নতুন চিন্তাধারায় এই রোগগুলিকে একত্রে বলা হয় মেটাবলিক সিন্ড্রোম।
রোগনির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণ রেখা
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খালি পেটে ১২৬ মি.গ্রা. (126 mg) বা পরিপূর্ণ আহারের ২ঘন্টা পরে ২০০ মি.গ্রা. (200 mg) এর বেশি হলে তার ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া খালি পেটে গ্লুকোজের মাত্রা ১১০মি.গ্রা (110mg) থেকে ১২৬ মি.গ্রা. (126mg) এর মধ্যে এবং আহারের পরে ১৪০ মি.গ্রা.থেকে ২০০ এর মধ্যে (140mg to 200 mg) হলে তাকে প্রাক ডায়াবেটিস বলে যা কিনা পরবর্তীকালে পূর্ণাঙ্গ ডায়াবেটিস রূপে দেখা দিতে পারে। ভারতবর্ষে প্রাক ডায়াবেটিস রুগীর সংখ্যাও বিপজ্জনক। শহরাঞ্চলে শতকরা ৮.৭ এবং গ্রামাঞ্চলে ৭.৪ শতাংশ আক্রান্ত। পূর্ণাঙ্গ ডায়াবেটিসের সঙ্গে এই বিপুল সংখ্যক প্রাক ডায়াবেটিস ধরলে সহজেই আনুমেয় বর্তমানে আমরা কোথায় আছি। এতো গেলো প্রথমবারের রোগ নির্ণয় এর কথা। কিন্তু আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা জানতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ২-৩ মাস পরপর রক্ত পরীক্ষা বাঞ্ছনীয়। ডায়াবেটিস কখনও সারে না, এ কথা মাথায় রেখেই একে নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর বা গুরুত্ব দিতে হবে। খালিপেটে ৯০ মি.গ্রা থেকে ১১০ মি.গ্রাএর মধ্যে এবং আহারের পরে ১১০ মি.গ্রা. থেকে ১৪০ মি.গ্রা. এর মধ্যে (বয়স্কদের ক্ষেত্রে <180 মি.গ্রা. এর কম) থাকলে ডায়াবেটিস খুব ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া বছরে ৪ বার রক্তে Hb A1c বলে একটা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এটা আরও বেশী কার্যকর পরীক্ষা এবং রক্তের সুগারের বিগত তিন মাসের গড় অবস্থা সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে। Hb A1cএর মাত্রা রক্তে ৬.৫-৭ শতাংশের নীচে থাকলে তার ডায়াবেটিস ভাল নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করা যেতে পারে।
রোগের শ্রেণীবিভাগ
সাধারণত ডায়াবেটিসকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। টাইপ-1 এবং টাইপ-2। টাইপ-1 রুগীর সংখ্যা আমাদের দেশে মাত্র ৫ শতাংশ কিন্তু টাইপ-২ অবশিষ্ট ৯৫ শতাংশ। টাইপ-1 রুগী জন্ম লগ্ন থেকেই ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল কেননা এদের শুরু থেকেই ইনসুলিন শরীরের ভিতর তৈরি হয় না। কিন্তু টাইপ-2 এর ক্ষেত্রে প্রথম দিকে মুখে ট্যাবেলট দিয়ে চিকিৎসা হলেও কোন না কোন সময় তাকে ইনসুলিন নিতে হয়। এছাড়াও গর্ভবতী অবস্থায় প্রথম শনাক্ত হওয়া সুগারকে একটি বিশেষ শ্রেণীতে আবদ্ধ করা হয় যার নাম জেসটেশনাল ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং এর চিকিৎসা শুধুমাত্র ইনসুলিনের সাহায্যে করতে হয়। আর একটি বিশেষ শ্রেণীর ডায়াবেটিস আছে (other specific type) যা প্রধানত প্যানক্রিয়াসের সংক্রমণ বা প্রদাহ জনিত কারণে বা জিন ঘটিত ত্রুটির কারণে বা কোন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে।
প্রাথমিক লক্ষ্মণ বা উপসর্গ
ডায়াবেটিসের সম্ভাব্য লক্ষ্মণগুলো
১ অন্য কারণ ছাড়া হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া,।
২ ঘনঘন প্রস্রাব বা জল
৩ কাটা, ঘা ইত্যাদি সহজে না শুকানো,
৪ জড়তা, ক্লান্তি, অবসা,
৫ যৌন দুর্বলতা বা যৌনাঙ্গে সংক্রমণ ইত্যাদি।
কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশী
যাদের নিম্নোক্ত শর্তগুলির এক বা একাধিক বর্তমান তাদের অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
১) উচ্চরক্তচাপ,
২) মাত্রারিক্ত কোলেস্টের,
৩) অস্বাভাবিক স্থূলকায়ত্ব,
৪) পরিবারে বাবা-মা ইত্যাদি কারও ডায়াবেটিস থাকলে,
৫) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল,
৬) হৃদরোগে ভুগছেন,
৭) বয়স ৪৫ এর ওপর,
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন আমাদের দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্তর বয়স পাশ্চাত্য দেশগুলির তুলনায় এক দশক আগে। এর পেছনে আছে জিন ঘটিত কারণ। জাতিগত ভাবে দঃ পূঃ এশিয়ার মানুষদের এই প্রবনতার আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে।
সংগ্রহ ও সম্পাদনা :
হাফিজ সরকার