1. news@spordhanews.com : স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন : স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন
  2. info@www.spordhanews.com : স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন :
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
তবে কি ভারতকে প্যাঁচে ফেলতে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ সার্কের বিকল্প জোট গঠন ?? বিএনপির কর্মী আটক।। ভিজিএফ কার্ড নিয়ে যুবক খুনের অভিযোগ।। ভেড়ামারায় পদ্মায় তীব্র ভাঙন।। আতঙ্কে তিন ইউনিয়নের নদীপাড়ের বাসিন্দা।। সাঁওতাল বিদ্রোহ অবিস্মরণীয় অধ্যায় আবরও কিউবার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল আমেরিকার।। কড়া প্রতিবাদ চীনের।। ইমোতে কল দেন ইবি শিক্ষক ! ছাত্রী মোটা না চিকন হয়েছে দেখতে !!! বর্তমান ‘ফিটনেস’ বিহীন উপদেষ্টা পরিষদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব নয় ।। চিলিতে এই প্রথম, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী। হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা থেকে মালয়েশিয়া।। নয় বছরের পরিক্রমা।। সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর কাহিনী : — (২)

সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর কাহিনী : — (২)

হাফিজ সরকার
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫
  • ৫০ বার পড়া হয়েছে

 

নিউজ স্পর্ধা প্রতিদিন।। বিশেষ প্রতিবেদন।।

(পুর্বে প্রকাশের পর)

 দামনে কোহ এলাকায়:

 জঙ্গল সাফ করার কাজে ও চাষের কাজে সাঁওতালদের যতেষ্ট দক্ষতা ছিল। তাই জমিদাররা নিজ নিজ জঙ্গলে চাষাবাদ করার জন্য তাদের উ ৎসাহ দিত। এই উপায়ে জমিদাররা তাদের মেহনত দিয়ে নিজেদের আয় বাড়িয়ে নিত।

উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে তারা দামনে কোহ (রাজমহল পাহাড়তলী) এলাকায় আসতে থাকে। সেখানে বিস্তর উর্বর জমি পতিত বা জঙ্গলে ঢাকা পড়েছিল। তারা এখানে এসেছিল জমি পাবার জন্য এবং তাদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল বন কেটে জমি হাসিল করার জন্য। পঁচিশ বছরের মধ্যে প্রায় এক লাখ সাঁওতাল এসে প্রায় পাঁচ লাখ বিঘা জমি হাসিল ও আবাদ করে। তারা ভাবত সে জমি তাদের নিজেদের, কিন্তু অল্পকালের মধ্যে তা জমিদার মহাজনের হাতে চলে যেতে থাকে। জমিহারা হয়ে তখন তারা তাদের পরগনাইত বা মোড়লদের সহিত আলোচনা করে কি উপায়ে জমি ফেরত পাওয়া যায়।

সেকালে রাজমহলের পাহাড় এলাকায় যে পাহাড়িয়ারা বাস করত তারা পাহাড়তলীর জমি চাষ করার জন্য নিচে আসত না। সমতলের অ-সাঁওতাল বাঙালী কৃষকরাও এগিয়ে গিয়ে সে জমি চাষ করতে ভরসা পেত না। সেখানে প্রচুর উর্বর জমি ছিল, অথচ নিজের এলাকায় থেকে সাঁওতালরা জমি পাচ্ছিল না। ১৭৯০ সনে ইংরেজ কোম্পানির সরকার ঘোষণা করে যে হাসিল করা জমির উপর আর কর ধার্য করা হবে না। ঘোষণায় আরো বলা হয় যে, কোন কৃষক যত খুশি জমি চাষ করতে পারে।

 

দামনে কোহ বা বর্তমান রাজমহলের পাহাড়তলী অঞ্চলকে ১৮:৩২ সনে বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। এই অঞ্চল পড়ে তখনকার ভাগলপুর, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে। দামনে কোহের আয়তন ছিল ১৩৬৩ বর্গামাইল। তার মধ্যে ৫০০ বর্গ মাইলে পাহাড় ছিল না। ১৮৫০ সনে এই ৫০০ বর্গ মাইল এলাকার প্রায় অর্ধেক অংশে জঙ্গল ছিল, বাকি অর্ধেক হাসিল করা হয়েছিল।

অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগেও উনবিংশ শতকের প্রথম ভাগে বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বীরভূম, কটক, মানভূম, ছোটনাগপুর, হাজারিবাগ ইত্যাদি অঞ্চল থেকে দামনে কোহ এলাকায় এসে সাঁওতালরা বসবাস করতে থাকে। ১৮৩৬ সন পর্যন্ত সেখানে সাঁওতাল ও ভূঁইয়ারা, প্রধানত সাঁওতালরা, ৪২৭ খানি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে জানা যায়। তারপর তাদের সংখ্যা খুব বেড়ে যায় এবং ১৮৬১ সন নাগাদ প্রায় ১৫০০ গ্রামে তাদের সংখ্যা হয় ৮৩ হাজার।

 

ব্যাপারী ও মহাজনের হামলা:

 দামনে কোহ এলাকায় এসে চাষ বাস করে সাঁওতালরা প্রথমে অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ করেছিল। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই তাদের এই অবস্থায় নতুন উৎপাত দেখা দিল। অনেক বাঙালী, ভোজপুরী ও ভাটিয়া ব্যাপারী ও মহাজন দামনে কোহ এলাকায় এসে তাদের কারবার শুরু করলো।

তখন সাঁওতালদের মধ্যে আধুনিক মুদ্রা অর্থনীতির প্রচলন বিশেষ হয়নি, টাকা পয়সার লেনদেন তেমন ছিল না। তাদের সমাজে স্বাভাবিক অর্থ ব্যবস্থার প্রভাবই ছিল বেশি। তারা জমি চাষ করত, তারা এসব নিজেরা ভোগ করবে বলে এবং কিছু বিনিময় করে কাপড়-চোপড়, তেল-নুন ইত্যাদির প্রয়োজন মেটাবে বলে।

ব্যাপারীরা এসে কেনাবেচার কারবার শুরু করে। তারা সরলচিত্ত সাঁওতাল কৃষকদের ফসল মাটির দরে কিনে নিয়ে বাইরে চালান করে আর সেই সঙ্গে বাইরে থেকে আমদানি করা লবণ ও অন্যান্য পণ্য চড়া দরে তাদের মধ্যে বিক্রি করে অনেক মহাজনও এ কারবার করত। দর কম বা বেশি ছাড়া তাদের আরো ঠকিয়ে কেনবার ও বেচবার জন্য তারা দুরকম বাটখারা বা পাথর রাখত। কেনবার সময় ব্যবহার করত বড় বাটখারা, তার নাম ছিল কেনারাম বা বড়বৌ। আর বেচবার সময় ব্যবহার করত ছোট বাটখারা, তারনাম ছিল বেচারাম বা ছোট বৌ।

ব্যাপারীরা তাদের ফসল কিনে ও অন্যান্য পণ্য তাদের নিকট বিক্রি করে অত্যাধিক মুনাফা লুটত। সেই মুনাফাকে আরো ফাঁপিয়ে তুলত সুদের কারবার করে। কোন সাঁওতাল কৃষক পরিবার নতুন এসে জমি হাসিল করবার সময় খোরাকির জন্য ব্যাপারীর নিকট কিছু ধান চাইলে সে ধার দিত, কিন্তু জমি হাসিল করা ও ফসল বোনা হলেই সেই জমি দখল করত।

 আবার কোন পরিবার তাদের খোরাকির ধান ফুরিয়ে যাবার পর সামাজিক ক্রিয়া উপলক্ষে যদি ব্যাপারীর নিকট কর্জ চাইত,সে তাদের উপবাস থেকে বাঁচবার মতো সামান্য পরিমাণে ধান কর্জ দিত। কিন্তু কর্জ ধানের ভাত খাবার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মহাজনের গোলাম হয়ে থাকতে হতো। তারা দেনা শোধ করার জন্য যতই খাটুক না কেন, যতই টানাটানি করে ও সঞ্চয় রেখে সংসার চালাক না কেন, ব্যাপারী তাদের সমস্ত ফসল দখল করে নিত এবং বাকি দেনার জন্য পরের বছরের ফসলের উপর দাবি রাখত। এমনিভাবে বছরের পর বছর সমস্ত রক্ত নিংড়ে দিয়েও খাতক তার দেনার দায় থেকে কখনো রেহাই পেত না।

এই অন্যায় জুলুম বরদাস্ত করতে না পেরে যদি কোন খাতক জঙ্গলে চলে যাবার কথা বলত তাহলে মহাজন তাকে কোন কথা জানতে না দিয়ে benco Si ওগাপনে আদালতে যেত এবং ঘুষের সাহায্যে তার উপর ডিক্রি জারি করাত। খাতক হঠাৎ দেখত তার গরুমোষ, তৈজসপত্র, হাঁড়ি-থালা পর্যন্ত নিলাম হয়ে গেল। স্ত্রীর সম্মানের চিহ্ন যে সামান্য লোহার বালাটুকু তাও বাদ যেত না, ছিনিয়ে নেওয়া হতো।

 এই এলাকার জন্য যে ইংরেজ জজ নিযুক্ত হয়েছিল, সে সরকারের রাজস্ব আদায় নিয়েই ব্যস্ত থাকত, জনগণের ছোটখাট সালিশ শোনবার তার অবসর ছিল না। অধস্তন দেশী কর্মচারীরা প্রত্যেকেই অত্যাচারীদের পয়সা খেত, পুলিশও তার শরিক ছিল। এ সবের খবর গর্ভর্মেন্টও রাখা দরকার মনে করত না অথবা জেনেও জানতা না। একজন মাত্র ইংরেজ অফিসারকে পাঠানো হয়েছিল সাঁওতালদের দেখাশোনা করতে। দেখাশোনা কিছু হতো না, কিন্তু কোনো অত্যাচার না হলেও সেই অফিসারের ব্যবস্থাপনায় চাষের ক্ষেত বাড়ানো হতো তাতে রাজস্বও বাড়ত; রাজস্ব বেড়ে হয়েছিল ১৮৩৮ সনে ৬৬৮ পাউন্ড থেকে ১৮৫৪ সনে ৬৮০৩ পাউণ্ড।

মহাজন ও ব্যাপারীদের বর্বর অত্যাচারের কোন প্রতিকার ছিল না। আদালত ছিল বহু দূরে। নির্যাতিত গরিব কৃষক ও অন্যান্য শ্রমজীবীরা কেঁদে মরত, কেউই তাদের সাহায্য করত না। নিরাশ হয়ে সাঁওতালরা বলত, ভগবান মহৎ, কিন্তু বড় দূরে আছে।

(চলবে)

মহাজনের হিংস্র থাবা :

সংগ্রহ ও সম্পাদনা

হাফিজ সরকার

সাবেক ছাত্রনেতা,

লেখক ও কলামিস্ট।।

 

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট