স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন ।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
ভারতকে কোঠাসা করতে একযোগে কৌশলী পদক্ষেপ বেজিং-ইসলামাবাদ-ঢাকার। মূলত পাকিস্তান ও চীন যৌথভাবে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের পরিকল্পনা করছে। তাতে শামিল হবে বাংলাদেশও। পাকিস্তানের 'দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন'-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, নয়া আঞ্চলিক জোট গঠন নিয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। নতুন এই জোটটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
গত ১৯ জুন চীনের কুনমিং শহরে নয়া আঞ্চলিক জোট নিয়ে পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ত্রিদেশীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে 'দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন'-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এই বৈঠকে তিন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিকরা অংশ নেন।
করাচি-ভিত্তিক 'দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন'-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ, "১৯ জুন কুনমিংয়ে বৈঠকের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল সার্কের অংশ থাকা অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিকে নতুন জোটে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো।"
কুনমিংয়ে নয়া জোট সংক্রান্ত বৈঠকের আগে, গত মে মাসে অনুষ্ঠিত একই ধরণের চীন-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। সেখানে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর সম্প্রসারণ এবং তালিবান-শাসিত ইসলামিক আমিরাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ঢাকায় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) গঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল সাতটি দেশ। আফগানিস্তান ২০০৭ সালে এই জোটে যোগ দেয়।
সার্ক কেন নিষ্ক্রিয়?
সার্ক তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আঞ্চলিক সম্প্রীতি এবং অর্থনৈতিক একীকরণ বৃদ্ধির জন্য তৈরি হয়েছিল। তবে, ২০১৬ সাল থেকে সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয়। যদিও ২০১৪ সালের কাঠমান্ডু শীর্ষ সম্মেলনের পর থেকে সার্ক নেতারা কোনও বৈঠক করেননি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২০ সালে প্রথম সার্ক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোভিড জরুরি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি ভারতের অবদান হিসেবে ১০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সেই বছরের নভেম্বরে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যা পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় উরিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার কারণে ভারত বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হয়েছিলেন।
আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং ভুটানও সন্ত্রাসবাদ এবং আঞ্চলিক হস্তক্ষেপের উদ্বেগের কারণে সেবারের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেনি। শীর্ষ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছিল এবং তারপর থেকে সার্কের আর কোনও কার্যকারী বৈঠক হয়নি।
কেন নয়া জোট প্রয়োজন?
'দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, "পাকিস্তান এবং চীন উভয়ই আঞ্চলিক সংহতি এবং সংযোগের জন্য একটি নতুন সংগঠন তৈরি সময়ের প্রয়োজন বলে নিশ্চিত।" প্রতিবেদনে উল্লেখ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং আফগানিস্তান-সহ সার্ক সদস্যরা নতুন আঞ্চলিক গোষ্ঠীর অংশ হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া:
তবে বাংলাদেশ ঢাকা, বেজিং এবং ইসলামাবাদের মধ্যে কোনও উদীয়মান জোটের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, চীনের কুনমিংয়ে তিন দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি "রাজনৈতিক" নয়। ঢাকার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন ১৯ জুন কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক সম্পর্কে বলেছেন, "এটি সরকারি পর্যায়ের একটি বৈঠক ছিল, রাজনৈতিক পর্যায়ের কোনও আলোচনা হয়নি। ওই বৈঠকে জোট গঠনের কোনও উপাদান ছিল না। আমরা কোনও জোট গঠন করছি না।"
ভারতকেও আমন্ত্রণ!
'দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, "ভারতকে নতুন আঞ্চলিক জোটে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে ভিন্ন স্বার্থের কারণে, দিল্লির পক্ষে সেই আমন্ত্রণের ইতিবাচকভাবে সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা কম।"
ভারত উন্নত আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সংযোগের জন্য সার্ককে ব্যবহার করার চেষ্টা করলেও, পাকিস্তান সেটিকে বার বারই কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে।
বৃহত্তম সদস্য হিসেবে ভারত সার্কে উল্লেখযোগ্য অর্থ দিয়ে থাকে। সদস্য দেশগুলির মধ্যে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সার্ক উন্নয়ন তহবিল এবং নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
দিল্লির সার্ক সহযোগিতার আবেদনকে রুখতে ব্যস্ত ইসলামাবাদ:
সার্ককে পারস্পরিক সহযোগিতায় ব্যবহারে রাজি নয় পাকিস্তান। বিশেষ করে বাণিজ্য প্রোটোকল এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী ব্যবস্থার মতো উদ্যোগগুলিকে বাধা দেওয়ার জন্য ইসলামাবাদের সার্কের ভেটোর ব্যবহার, সংগঠনের মসৃণ কার্যকারিতা একাধিকবার ব্যাহত করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে কাঠমান্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় পাকিস্তান সার্ক মোটর যানবাহন চুক্তিতে ভেটো দিয়েছে। এটি সদস্য দেশগুলির মধ্যে যাত্রী এবং পণ্যবাহী যানবাহনের আন্তঃসীমান্ত চলাচলের প্রস্তাবিত কাঠামোকে বাধাগ্রস্ত করেছে। পাকিস্তানের এই বাধার ফলে ২০১৫ সালে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপাল উপ-আঞ্চলিক বিবিআইএন মোটর যানবাহন চুক্তি অনুসরণ করতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে, ভারত, নেপাল এবং ভুটান সার্কের ছাতার অধীনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনে যৌথ প্রচেষ্টার পাশাপাশি পরিকাঠামো এবং সামাজিক প্রকল্পগুলিতে সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছে।
২০১৬ সালের উরি হামলার পর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়, যার ফলে ভারত এবং অন্যান্য সদস্যরা ইসলামাবাদ শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করে। যার ফলে ২০১৪ সাল থেকে সার্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি বহুপাক্ষিক গোষ্ঠীর আগ্রহকে শিথিল করে দেয়।