স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন।। অনলাইন ডেস্।।
জুলাই আন্দোলন দেখেছে বাংলাদেশ। দেখেছে সরকারের পতন। এক বছর পেরিয়ে গিয়েও, সেই জুলাইয়েই আবার উত্তাল পদ্মাপারের গোপালগঞ্জ। হাসিনার জেলা, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এতদিন যা আওয়ামী লিগ-গড় বলে পরিচিত, সেই গোপালগঞ্জেই ধুন্ধুমার।
উত্তাল পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, সংঘর্ষে গুলি-বুলেট প্রাণ কেড়েছে তিন জনের। নানা স্থানে হাসপাতালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভর্তি রয়েছেন অন্তত ন' জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা হয়েছে কার্ফু, ১৪৪ ধারা। এলাকায় চাপা আতঙ্ক। থমথমে পরিবেশ।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, বুধবার মুজিব-হাসিনার গোপালগঞ্জে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির তথা এনসিপি। সূত্রের খবর মুজিব-হাসিনা বিরোধী ওই মিছিলের প্রতিরোধ গড়ে তোলে গোপালগঞ্জবাসি।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য মহম্মদ ইউনূসের অন্তবর্তী সরকার আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও, গোপালগঞ্জ এখনও নিয়ম করে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের মুহূর্ত গোনে। প্রায়ই নিয়ম করে আওয়ামী লিগ সেখানে জমায়েত করে বলেও জানা যায়। সেখানেই এনসিপি সমাবেশ করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনা প্রসঙ্গে এনসিপি সমর্থকরা জানিয়েছেন, তাঁরা এগিয়ে যেতেই আওয়ামী লিগ সমর্থকরা তাঁদের উপর আক্রমণ চালায়। ঘটনাস্থলে হাজির হয় পুলিশ-সেনা। অভিযোগ আওয়ামী লিগের কর্মী-সমর্থকরা পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটনায়। অন্যদিকে অভিযোগ ঘটনায় আহত হয়েছেন একধিক গোপাল্গঞ্জবাসি। গোপালগঞ্জে অশান্তির পর জারি ১৪৪ ধারা, কার্ফু।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, বুধবারের হিংসা-অশান্তির ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে দীপ্ত সাহা, রমজান কাজী সোহেল রানা মোল্লার। তাঁদের বাড়ি সিকদারপাড়া, কোটালিপাড়া এবং টুঙ্গিপাড়ায়। নিহত সোহেল মোল্লা গোপালগঞ্জ শহরের চৌরঙ্গী এলাকার একটি দোকানে কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। বেশকয়েকজন আহতদের একাধিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ। উত্তাল পরিস্থিতি, গুলি, মৃত্যু, চাপা ক্রোধের প্রকাশের মাঝে দাঁড়িয়ে দেশ ছেড়েছিলেন মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনা। তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়তেই সোনার বাংলাদেশ রাতারাতি হয় সেনার বাংলাদেশ। পরে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার দেখভালের দায়িত্ব নেই। সেই অন্তবর্তী সরকার দিনে দিনে হাসিনা প্রবর্তিত নানা নিয়ম কানুনে বদল এনেছে গত এক বছরে।
এখানে উল্লেখ্য জুলাই উপলক্ষে এসিপির বিভিন্ন জেলায় কর্মসুচি ছিল পদযাত্রা কিন্তু গোপালগঞ্জে ছিল ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ যার আড়ালে ছিল ৩২ নম্বারের মত শেখ মুজিবে সমাধীশৌধ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া। তিন দিন আগে থেকেই এলাকায় চলে ব্যাপক পুলিশ-সেনা আভিজান । সুত্রমতে জানা যায়, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী তো দূরে থাক তাদের স্ত্রী সন্তানরাও এলাকা ছাড়া। প্রতিরোধ আসলে গড়ে তুলেছে পোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষ। ছয় বছরের শিশু থেকে সত্তর বছরের বৃদ্ধ এবং মহিলারাও অংশগ্রহন করে বলে সুত্রমতে জানা যায়। সকল মসজিদের মাইকে এনাউন্স করা হয় শেখ মুজিবে সমাধীশৌধ রক্ষার জন্য। আরও জানা যায় গোষনা হয়েছিল একজন গোপাল্গঞ্জবাসি বেঁচে থাকতেও ঐ সমাধীশৌধে কাউকে হাত দিতে দেওয়া হবেনা।
সেসবের মাঝেও, বারে বারে বাংলাদেশ অশান্ত হয়েছে। উত্তাল হয়েছে নানা ইস্যুতে। বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ নাহিদ ইসলাম প্রথমে অন্তবর্ত সরকারের অংশ থাকলেও, পরে নতুন দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অন্তবর্তী সরকার থেকে সরে আসেন। নতুন দল এনসিপি আত্মপ্রকাশ করে মাসখানেক আগেই। সেই দলের সমাবেশ ঘিরেই নতুন করে আরও এক জুলাইয়ে অশান্ত হয়ে উঠল বাংলাদেশ। ফিরে এল এক বছর আগে স্মৃতি। এনসিপির বুধবারের অশান্তির ঘটনায় অভিযোগ যেমন আওয়ামী লিগের ছাত্রলিগের বিরুদ্ধে, তেমনই অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ নিষ্ক্রিয়তার। অশান্তির ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক। গোপালগঞ্জ জুড়ে জারি ১৪৪ ধারা।