স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন। বিশেষ প্রতিবেদন।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ নামে নুতন বাংলাদেশের মানচিত্র প্রকাশ নিয়ে চাঞ্চল্য।
এতদিন বাংলাদেশের মজলুম জননেতা হিসাবে পরিচিত মাওলানা ভাসানীর একটি আপ্তবাক্য বাংলাদেশের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী প্রচার করে আসছিলঃ “আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার, ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্নতা পাবেনা”।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রদর্শনীতে ভারতের অংশ নিয়ে ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ নামে একটি মানচিত্র প্রকাশ করলো তুর্কি যুব ফেডারেশন নামে একটি এনজিও।একই ভাবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মাহফুজ আলম নামে অন্তর্বর্তী সরকারের আরেকজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা ভারতের অংশ নিয়ে আরও একটি মানচিত্র সোসাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছিল।পরবর্তীতে উপদেষ্টা বিপদ বুঝতে পেরে মানচিত্রটি সোসাল মিডিয়া থেকে তুলে নিয়েছিলেন।তিনি যদি সরকারের অংশ না হতেন তাহলে মানচিত্রটি তিনি তুলে নিতেন না।এতে পরিস্কার হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা ভারতের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে।যার আরও একটি পরিকল্পনা সামনে এলো।
এই মানচিত্র প্রকাশ নিয়ে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সাংসদ রনদ্বীপ সিং সূর্য্যেওয়ালার এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর লিখিত ভাবে এই তথ্যটি রাজ্যসভায় পড়ে শোনান।এই মানচিত্রের সাথে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত থাকায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা নজর রেখেছে এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে বিদেশমন্ত্রী রাজ্যসভায় জানিয়েছেন।
বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,মানচিত্রটি ২০২৫ সালের ১৪ই এপ্রিল ১লা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছিল।এই নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি একটি ফ্যাক্ট-চেকার প্লাটফর্ম জানিয়েছে এই মানচিত্রটি তথাকথিত পূর্ববর্তী বাংলার সালতানাতের উল্লেখ করে একটি ঐতিহাসিক প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছিল।কিন্তু তাদের এই ফ্যাক্ট চেকিংয়ের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
আইএস এবং লস্কর-এ-তৈয়বার পর আরও একটি জঙ্গি সংগঠন সালতানাত-ই-বাংলা নামে টার্কিশ যুব ফেডারেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেটার বাংলার মানচিত্র প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অস্তিত্ব জানান দিল।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মূল কারিগর ছিল হিজবুত তাহরীত আইএস এবং পাকিস্তান ভিত্তিতে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-এ-তৈয়বার যৌথ পরিকল্পনার অংশ।শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলো
একেকটি মিনি কেন্টনমেন্ট হিসাবে পরিনত হয়েছে।শহরের সব সন্ত্রাসী হামলার মূল উৎস এসব ছাত্রাবাস।সরকার সব জানে কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণ করেনা।এপর্যন্ত সেক্রেটারিয়েট সহ ঢাকা শহরে ছাত্রদের দ্বারা যত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংগঠিত হয়েছে তার নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস।দেখানো হয়েছে এরা রাজনৈতিক শক্তি কিন্তু এই শক্তির পিছনে রয়েছে বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের মদত।
এসব জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা এখন আর গোপন নেই।ঢাকা কলেজ,নটরড্রাম কলেজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে আইএসের শক্ত সংগঠন।তারা কালেমা লেখা ব্যানার নিয়ে প্রকাশ্য
রাজপথে মিছিল এবং ‘আমরা সবাই জঙ্গি’ বলে শ্লোগান দিতে দ্বিধা বোধ করেনা।এসব সংগঠনের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কিন্তু যখন তারা রাস্তায় নামে তখন সেনাবাহিনী পুলিশ তাদের পাহাড়ায় ব্যস্ত থাকে।
বাংলাদেশ কোন পথে এবং ভারতের জন্য বর্তমানের বাংলাদেশ কতটুকু বিপদজনক তা এই ঘটনায় সামনে এসেছে।
১৯৭১ সালের অক্টোবরের ৩ তারিখ মাওলানা ভাসানী ভারতের ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে আসামের ধুবড়ীতে ৫ একর জমি চেয়ে একটি পত্র লেখেন। চিঠিটি তিনি লিখেন ভারতের দেরাদুন ক্যাম্প থেকে।
তিনি সেই চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, তিনি ভারতের সাথে বাংলাদেশের একটি কনফেডারেশন চেয়ে আজীবন সংগ্রাম করে যাবেন এবং আর কখনো ভারতের অবাধ্য হবেন না কিংবা ভারতের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলবেন না বলে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন।
ইন্দিরা গান্ধী এই চিঠিটির জবাব দেন নি কিংবা হতে পারে যে প্রয়োজন মনে করেন নি। চিঠিটি ইন্দিরা গান্ধীকে ইংরেজীতে অনুবাদ করে পাঠানো হয়।
আসামে ৫ একর জমি না দেয়াতে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনের কাছে ৪০ হাজার টাকা চেয়ে না পাওয়ায় তিনি পরবর্তী ভারতের ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করেন। (হাই কমিশনের অর্থের বিষয়টার সূত্র মন্তব্যে যোগ করা হলো)
মাওলানা ভাসানীর সেই চিঠির একটি অংশ এখানে দিলুম। বাকী অংশে মন্তব্যে। এই চিঠিটির মূল, যেটি তাঁর হাতে লেখা বাংলায় সেটিও মন্তব্যের ঘরে দিয়ে দিলাম। ইংরেজী অনুবাদটুকুও দিয়ে দিলাম।