স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন।। সম্পাদকীয়।।
৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দুই চাকার যান মোটর সাইকেল,চার চাকার যানের চেয়ে।যেখানে সুশৃঙ্খল ও বিজ্ঞানভিত্তিক ট্রাফিক ব্যবস্থা নাই , প্রশিক্ষন বিহীন অটো রিক্সা, প্রশিক্ষন বিহীন স্থানীয় যানবাহন নির্বিগ্নে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তায় ,দেখার কেউ নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত এমন দেশের সড়কে ছোট খানা-খন্দ বা সামান্য ভেজা বা তেল পড়ে থাকলে, এমনকি একটা পাথর ওড়ে থাকলে উচ্চ গতিসম্পন্ন দুই চাকার যান উল্টে যায়। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। যে কারণে শহরে যানবাহনগুলি আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন হিসেবে চিহ্নিত।
সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা পুরো পৃথিবীতেই বেশি ,এর সাথে যুক্ত হয়েছে মটর চালিত রিক্সা,অটোরিক্সা, স্থানীয় ভাবে তৈর বালি টানা বডবডি গাড়ি । মটর সাইকেলের ক্ষেত্রে কারণ এটি দুই চাকার বাহন। এর বেশির ভাগ চালকই তরুণ। তারা আইনের ঊর্ধ্বে থাকে এবং এটাকে থ্রিল হিসেবে নেয়। ফলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে তাদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। দেশ, পরিবার ও সমাজের জন্য এটা বড় ক্ষতি। এ কারণে বিভিন্ন দেশে বাহনটির রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বিশেষ করে কুষ্টিয়ায় এক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ততটা মানা হয় না।
উন্নয়ন ও শিল্পায়নের নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রির সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। অথচ এ ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তাদের পেশাদার অভিজ্ঞতা কম। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তরুণ প্রজন্ম। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন ছিল। অনেক পরিবারে একটা সন্তানই থাকে। সন্তান যদি অকালে মারা যায়, তাহলে এর দায় মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে। এত সাধারণভাবে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। এজন্য সংশ্লিষ্ট শিল্প সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হয়। কিন্তু জ্ঞান কম থাকার কারণে দেশে প্রণোদনা দিয়ে মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি অর্ধেক করা হয়েছে। এরপর সিসি বাড়ানো হয়েছে। অথচ অতিরিক্ত সিসির মোটরসাইকেলে খুব অল্প সময়ে উচ্চ গতি তোলা যায়। অতিরিক্ত গতির কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।
পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দুই চাকার যান চার চাকার যানের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সুশৃঙ্খল ও বিজ্ঞানভিত্তিক ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত এমন দেশের সড়কে ছোট খানা-খন্দ বা সামান্য ভেজা বা তেল পড়ে থাকলে, এমনকি একটা পাথর পড়ে থাকলে উচ্চ গতিসম্পন্ন দুই চাকার যান উল্টে যায়। অন্যদিকে আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। যে কারণে এ দেশে যানটি আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন।
তাই সরকারের নীতিনির্ধারকদের মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার আগে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন ছিল। তাদের বিবেচনায় নিতে হতো, এ ইন্ডাস্ট্রি হলে আমাদের পরিবহন ব্যবস্থায় কী ধরনের প্রভাব ফেলবে। এটা সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে কিনা।
মোটরসাইকেল চালকদের ট্রাফিক পুলিশের হাতের নিচ দিয়ে চলে যেতেও দেখা যায়। অনেকেই লেভেল ক্রসিং বারের নিচে দিয়ে চলে যায়। কেউ বাধা দিতে গেলে তাদের অনেকেই মারমুখী হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে যদি জবাবদিহিমূলক ট্রাফিক ব্যবস্থা তৈরি করা না যায়, তাহলে আগামীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও মৃতের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে।
তবে গবেষণা বলে, মোটরসাইকেলের মতো এমন ৩০ গুণ ঝুঁকিপূর্ণ বাহনকে ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা বেশ কঠিন কাজ। কারণ এ বাহনের চালকের ট্রাফিক সিগন্যাল বা আইন ভাঙার প্রবণতা থাকে। সে স্বেচ্ছায় আইন মানতে চায় না। যে কারণে যুক্তরাজ্যে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি চার চাকার বাহনের চেয়ে বেশি, যাতে একজন মোটরসাইকেল কিনতে নিরুৎসাহিত হয়। এটাকে বলা হয় পেশাদারত্ব। অন্যদিকে এ দেশের অপেশাদার ব্যক্তিরা দুই চাকার যান তৈরির ইন্ডাস্ট্রি গড়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত নেয়। এতে দেশের তরুণ প্রজন্ম যে মরে যাচ্ছে, সে দায়ও তারা নিচ্ছে না। এ জায়গায় আমাদের নাড়া দেয়া প্রয়োজন যে হয় পরিপক্ক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নয়তো দায় নিতে হবে।
তথ্যসুত্রঃ
ড. এম শামসুল হক:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক