স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন।।
এই পর্যন্ত জানা গেছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে হতাহতের দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এই ঘটনা নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটা কালো ক্ষত হিসেবে থেকে যাবে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। খবর পাওয়া যাচ্ছে, রাতে ধরপাকড় চলছে। সরকার বলছে, ছাত্রদের আন্দোলন জঙ্গিরা দখলে নিয়ে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু সরকারের কথা কেউ শুনছে না। অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ জনগন বিশ্বাস করছে এবং স্কুল কলেজের পোষাক পরিহিত ছাত্র তরুণকে গুলি করায় সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে।জেন- জি আন্দোলন নেপালের শাসকদের কি বার্তা দিল ? নেপালের ভবিষ্যত কোন দিকে ?
হিমালয়কন্যা হিসেবে পরিচিত নেপাল হঠাৎ রক্তাক্ত হলো। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ১৯ জন নিহত এবং দুই শতাধিক ছাত্র ও যুবক আহত হয়েছে। দুটি বিষয় এই ঘটনার ট্রিগার পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রথমত, কয়েক দিন আগে সরকার বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যথাযথভাবে নেপাল সরকারের রেজিষ্ট্রেশন না নিয়ে কর ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করার কারণে বন্ধ করে দেয়। এটা ছাত্র তরুণদের মধ্যে বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ক্ষোভের অন্যতম কারণ হলো, নেপালের জনসংখ্যার প্রায় ৭% প্রবাসে কাজ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রবাসীদের অধিকাংশই গরীব এবং গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ হওয়ায় সমাজে একটা অস্বস্তি তৈরি হয় এবং ছাত্র তরুণ যারা জেন- জি নামে নিজেদের পরিচয় দেয় তারা এই অস্বস্তির সাথে সরকারের দূর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে আন্দোলনের ডাক দেয়। জানা গেছে তারা টিকটিক ব্যবহার করে ৮ তারিখ জমায়েত হয় এবং পার্লামেন্ট ভবনের একটা অংশ দখল করে নিলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে।
বিশ্লেষকরা বলছে, বেশ কয়েক বছর ধরে নেপালের বামপন্থীরা বিভক্ত হয়ে সরকার চালাচ্ছে। কখনো প্রচন্ড প্রধানমন্ত্রী আবার কখনো অলি প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে কে পি অলি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। বিশ্লেষকরা প্রশ্ন রেখেছেন, এটা কি রেজিম চেইঞ্জের কোনো প্রচেষ্টার অংশ?
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য তারা দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে চায়। একজন শিক্ষার্থী বলছিল, নেতাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়াশোনা করে, সুবিধা ভোগ করছে।
এই ক্ষোভ প্রকাশের অন্য পিঠে রয়েছে, কর্মসংস্থানের সংকোচন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। ধারণা করা হয়, নেপালের বামপন্থী সরকার কিছুটা ভারতবিরোধী, কিছুটা চীনঘেঁষা। ভারত নেপালের গুর্খাসহ অনেক জাতিসত্তার কর্মসংস্থান করে, বিশেষ করে, সেনাবাহিনীর গুর্খারেজিমেন্টে। অন্যদিকে, নেপালের কংগ্রেস ও রাজতন্ত্র পন্থীরা ভারত ঘেঁষা। বিশেষ করে কট্টর রাজতন্ত্রীদের সাথে বিজেপির সংযোগ রয়েছে। এদিকে সম্প্রতি , অলির সরকার নেপালের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অংশ ভারতের দখলমুক্ত করতে চায় এবং তারা নেপালের মানচিত্রে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে ছাপিয়েছে। ভারতের বিজেপি সরকার তার বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার। ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি না হলেও উত্তেজনা আছে। নেপালে এখনো ভারতের সেনারা আছে এবং ভারতের সেনাবাহিনীতে নেপালিরা কাজ করে।
ভারত ও নেপালের মধ্যে কাঁটা হয়ে আছে চীন।
সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেসন থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী অলি এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো।
সরকার যদি ছাত্র তরুণদের কথা না শুনে, ধরপাকড় যদি বাড়িয়ে দেয় তবে সংসদে নেপালী কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করলে বা অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল সমর্থন প্রত্যাহার করলে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। দেশেবিদেশে অবস্থানরত নেপালীরা এই রক্তাক্ত ঘটনায় মর্মাহত এবং ইতিমধ্যেই সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে। ফলে পরিস্থিতি জটিল হবে এবং সরকারের পরিবর্তন অনিবার্য হবে। নেপালের অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানের সংকোচন, সরকারের দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা- সবমিলিয়ে নেপালের বামপন্থীদের তাদের জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল!
নেপালের সরকার আরও সহিংসতা ও ধড়-পাকড় থেকে সরে এসে, মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে জেন- জির বক্তব্য শুনুক- এ আশা করি। পুনরায় নিহতের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
তথ্যসুত্রঃ
শামসশির শরীফ।