স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন।। বিশেষ প্রতিবেদন।।
আজ ৩০ জুন ২০২৫ দুপুরে বিএনপির নেতৃবৃন্দ সাম্প্রতিক চীন সফরের বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এই ধরনের সাংবাদিক সম্মেলন একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষে স্বাভাবিক মনে হলেও যেহেতু সামনে নির্বাচনকে মাথায় রাখলে তা অবশ্যই ভাবার মতো। কারণ, অতি সম্প্রতি লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপির সাথে জামাত, এনসিপিসহ কয়েকটি দলের মানসিক দূরত্ব কিছুটা বেড়েছে। লন্ডনে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের প্রতিবাদে জামাত ঐকমত্য কমিশনের একটা বৈঠক বর্জন করেছে। এটা প্রতীকী হলেও এখানে একটা বার্তা ছিল তাহলো, দেশের মাটিতে বিএনপিকে অন্যদের মনোভাবকে মর্যাদা দিতে হবে। এনসিপি বলেই বসেছে, বিএনপি ক্ষমতায় যাচ্ছে, এর গ্যারান্টি কে দিয়েছে?
অন্যদিকে, ঐকমত্য কমিশনে বড় বড় প্রশ্নে বিএনপিকে গলদঘর্মহ তে হচ্ছে। এছাড়া, জুলাই সনদের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন ঘুরিয়ে বিএনপিকে দোষারোপ করেছে। এনসিপি সরাসরি অভিযোগ করে বলেছে, বিএনপির দিকে বসে থাকলে চলবে না। তারা নিজেরাই জুলাই সনদ বা ঘোষণা দিবেন। সাম্প্রতিক ইসলামি দলগুলোর সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী দাবি বিএনপিকে বেশ বিরক্ত করেছে। এই ধরনের রাজনৈতিক উত্তাপে অনেকেই বলছেন, নির্বাচন লন্ডন বৈঠক অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে কীনা! কারণ প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে এসে বলেছেন এপ্রিলে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতটা বললাম, এ কারণে যে, বিএনপি রাজনীতিতে বেশ অস্বস্তিতে আছে। তাই আজকের সাংবাদিক সম্মেলন সেই উত্তাপকে আরও বাড়ালো কীনা – তা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর চীনের রাষ্ট্রদূত বেশ তৎপর হয়ে উঠেছিলেন বা এখনও আছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল, কত তাড়াতাড়ি বিএনপি, জামাত এবং অন্য কয়েকটি দলকে চীন সফরে নিয়ে যাবেন এবং নিয়েছেনও। সর্বশেষ, বিএনপির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল গেছেন। গতকালের কিছু খবরে গয়েশ্বর রায় বলেছেন, চীন বাংলাদেশের বিষয়ে বেশ আগ্রহী। আজ মহাসচিব বললেন, চীন বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সাথে কথা বলতে মুখিয়ে আছে। চীনের এই আগ্রাসী আগ্রহের কারণ কি? শুধুই তাদের বিনিয়োগ? নাকি ভূ-রাজনীতি বা ভূ-অর্থনীতি। মনে হয় আরও আছে, যেমন তারা জানে, হাসিনা সরকারের উৎখাতের সাথে তারাও কোনঠাসা আছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের তীর চীনের দিকেও আছে। বিশেষ করে, ভারতের অনুপস্থিতিতে চীন যদি বাংলাদেশে বেশি প্রভাব বিস্তার করে তবে তাদের বার্মা অ্যাক্ট বা মিয়ানমারকে আরাকান আর্মি দিয়ে আরাকানে উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে চীন বড় বাধা। চীনের বেল্ট এন্ড রোড সহ নানা পরিকল্পনার বিরোধী যুক্তরাষ্ট্র। তাই বিএনপির চীন নিয়ে বাড়াবাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ নয়। প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পরও যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ইতিবাচক ছিল না। আবার বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, তারা চীনের একচীন নীতিকে সমর্থন করেছেন, তাও যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ নয়। রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়েও তারা চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন। এটাও যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ নয়। মহাসচিব বলেছেন, চীন বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক পরিবর্তনে সহযোগিতা করতে চায়। এটাও যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ নয় কারণ তারা জাতিসংঘকে কাজে লাগাতে চায়।
সবমিলিয়ে, বিএনপির এই সাংবাদিক সম্মেলন শুভ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে না। আজও এক চীনা কোম্পানি কাজ হারালো। জমি অধিগ্রহণের কাজ এগুলেও চীনের সহ কয়েকটি কোম্পানি গ্রীন এনার্জির কাজ হারালো। মনে হয় বর্তমান অন্তর্বতী সরকারও বিএনপির চীনের মাখামাখি যা মূলত পররাষ্ট্র দপ্তরের কাজ, তা পছন্দ করছে না।
সংবাদে প্রকাশ, প্রধান উপদেষ্টার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর আলাপ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং আন্তরিকতার সাথে হয়েছে। কি জানি ভয় হয়, যুক্তরাষ্ট্রের হাসি বা আন্তরিকতা বিএনপি বা দেশের জন্য কি সংবাদ নিয়ে আসে? কারণ, করিডোর নিয়েও দেশের রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অনূকূলে নয়।