1. news@spordhanews.com : স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন : স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন
  2. info@www.spordhanews.com : স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন :
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
তবে কি ভারতকে প্যাঁচে ফেলতে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ সার্কের বিকল্প জোট গঠন ?? বিএনপির কর্মী আটক।। ভিজিএফ কার্ড নিয়ে যুবক খুনের অভিযোগ।। ভেড়ামারায় পদ্মায় তীব্র ভাঙন।। আতঙ্কে তিন ইউনিয়নের নদীপাড়ের বাসিন্দা।। সাঁওতাল বিদ্রোহ অবিস্মরণীয় অধ্যায় আবরও কিউবার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল আমেরিকার।। কড়া প্রতিবাদ চীনের।। ইমোতে কল দেন ইবি শিক্ষক ! ছাত্রী মোটা না চিকন হয়েছে দেখতে !!! বর্তমান ‘ফিটনেস’ বিহীন উপদেষ্টা পরিষদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব নয় ।। চিলিতে এই প্রথম, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী। হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা থেকে মালয়েশিয়া।। নয় বছরের পরিক্রমা।। সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর কাহিনী : — (২)

সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর কাহিনী–(১)

হাফিজ সরকার
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

 

স্পর্ধা নিউজ প্রতিদিন।। বিশেষ প্রতিবেদন।।

ইংরেজ রাজত্বের দু’শ বছরের শাসন ও জুলুমের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষে বহু কৃষক বিদ্রোহ হয়ে গেছে। বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের দেশে কৃষকরাই প্রথম স্বাধীনতার পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিল। বাংলাদেশের কৃষকদের বিদ্রোহগুলি এক গৌরবময় ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে। সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ২৪ পরগণা জেলায় তিতুমীরের বিদ্রোহ, ফরিদপুর জেলায় দুদুমীরের নেতৃত্বে কৃষক বিদ্রোহ, সাঁওতাল কৃষকদের বিদ্রোহ, নীল চাষীদের বিদ্রোহ, পাবনা ও বগুড়ার রায়তদের বিদ্রোহ-এমনি যে সব বড় বড় সংগ্রাম হয়েছিল, তার মধ্যে সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব সমধিক।

সাঁওতাল কৃষকদের বিদ্রোহ ঘটেছিল একবার নয়, বার বার-১৮১১, ১৮২০, ১৮৩১, এবং ১৮৫৫-৫৬ সনে; পরে আবার ১৮৭১, ১৮৭৪-৭৫ এবং ১৮৮০-৮১ সনের বিদ্রোহ। এই সমস্ত বিদ্রোহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ও ব্যাপক ছিল ১৮৫৫-৫৬ সনের বিদ্রোহ। বিদ্রোহের শতবর্ষ পূর্ণ হতে আর বেশি দেরি নাই। পশ্চিমবাংলার কৃষক সভা এই শক্তিশালী ও গৌরবময় বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

কেন এই বিদ্রোহ?

———————–

নিরীহ, সরল প্রকৃতি ও শান্তিপ্রিয় সাঁওতাল কৃষকরা কেন বিদ্রোহ করেছিল? সাঁওতাল চাষীরা যখন জঙ্গল কেটে জমি হাসিল করত এবং সেই জমিতে গতরের মেহনত ঢেলে প্রচুর ফসল ফলাত, অমনি জমিদারের জিভে জল সরত সেই জমি কেড়ে নেবার জন্য। ব্যাপারীরা তাদের নানাভাবে ঠকাত এবং নামমাত্র দাম দিয়ে তাদের সমস্ত ফসল আত্মসাৎ করে নিত। মহাজনরা অতিরিক্ত হারে চক্রবৃদ্ধি সুদে কর্জ দিয়ে তা আদায়ের নামে তাদের ঠকিয়ে সর্বস্বান্ত করত ও শেষে একেবারে সারা জীবনের জন্য তাদের গোলাম বানিয়ে রাখত। জমিদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের ঘুষে পৃষ্ট হয়ে পুলিশ আমলারা তাদের অযথা হয়রান ও পীড়ন করত। এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পুঁজিবাদী বেনিয়া সরকার, তাদের উপর যে অকথ্য জুলুম ও পীড়ন চালাত, তার কোন রকম প্রতিকার করত না; সমস্ত অবস্থা জেনে শুনেও কেবল মোটা রাজস্ব আদায় করে কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধির তালে থাকত।

এই শোষণ, পীড়ন ও প্রতারণার ব্যবস্থা ক্রমে নিরীহ সাঁওতাল কৃষকদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তখন তারা বিদ্রোহের আগুন জ্বেলে দেয়।

বিদ্রোহের আসল কারণ ছিল সাঁওতালদের নিশ্চিন্ত হয়ে নিজেদের জমি বজায় রাখার ও চাষ করবার এবং চাষের ফসল ভোগ করবার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এবং সে জন্য সমস্ত অন্যায় শোষণ ও অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবার আকাঙ্খা। তাই বিদ্রোহের মূল দাবি ছিল জমি চাই, অত্যাচারী ও ঠকবাজ মহাজন ও ব্যাপারীদের শোষণ থেকে এবং বিদেশী শাসন থেকে মুক্তি চাই। জমিদারী মহাজনী ও বিদেশী ইংরেজদের শাসন ব্যবস্থা এই উভয়েরই বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করেছিল, দুইয়েরই অবসানের জন্য তারা হাজার হাজার কৃষকের রক্ত ও জীবন দিয়ে লড়েছিল।

পুরনো পরিচয়

_____________

বাংলা, বিহার ও ওড়িশায় অর্থাৎ এককালের সুবে বাংলার সাঁওতালরা একটা বড় উপজাতি। সংখ্যার দিক থেকে ভারতের মধ্যে একটি বৃহত্তম।

১৯৫১ সনের আদমশুমারির হিসেবে পশ্চিমবাংলায় তাদের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৪৫ হাজার। সাঁওতালী ভাষা যাদের মাতৃভাষা এমন লোকের সংখ্যা ছিল সারা ভারতে ২৮ লাখ; তার মধ্যে বিহারে ১৭ লাখ, পশ্চিমবাংলায় ৬ লাখ ৬৪ হাজার, ওড়িশায় ৩ লাখ ৩৬ হাজার এবং আসামে ৯৩ হাজার। পশ্চিমবাংলায় যে জেলাগুলিতে বেশি সাঁওতালের বাস সেখানে তাদের সংখ্যা এই: বীরভূমে ৭৮ হাজার, বাঁকুড়ায় ১ লাখ ৩৭ হাজার, মেদিনীপুরে ২ লাখ ২ হাজার, বর্ধমানে ১ লাখ ২৭ হাজার, মালদহে ৭২ হাজার, পশ্চিম দিনাজপুরে ১৪ হাজার এবং হুগলীতে ৪৮ হাজার। পূর্ববঙ্গে কিছু সাঁওতাল আছে।

[১৯৭১ সনের সেন্সাস অনুসারে সাঁওতাল উপজাতির সংখ্যা: সারা ভারতে ৩৬,৩৩,৪৫৯। পশ্চিম বাংলায় ১৩,৭৬.৯৮০; ওড়িশায় ৪.৫২,৯৫৩; বিহারে ১৮,০১,৩০৪ পশ্চিম বাংলার কয়েকটি জেলায়: মেদিনীপুরে ২,৮৬,০১০: পুরুলিয়ায় ১,৯৬,৬৩২; বর্ধমানে ১,৮০,২৮০; বাঁকুড়ায় ১,৫৭,৮০৬; পশ্চিম দিনাজপুরে ১,৩০,৪৭৩; বীরভূমে ১,০৪,৭২২; মালদায় ৯০,২৮৫: হুগলীতে ৭৫,১৩২]

সাঁওতালদের নিজস্ব ভাষা আছে। এই ভাষা তার প্রকৃতির দিক থেকে বাংলা ও হিন্দী ভাষার সঙ্গে মেলে না। এতকাল এই ভাষায় নিজস্ব কোন বর্ণমালা ছিল না। তাই বাংলা, হিন্দী, রোমান প্রভৃতি বর্ণমালার সাহায্যেই এই ভাষা লেখা হতো। পঞ্চাশের দশকেও সাঁওতালী ভাষায় শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা কিছুই ছিল না: এখন (১৯৮০) অবস্থার কিছু পরিবর্তন ঘটছে। একটা নতুন বর্ণমালা, “অলচিকি” রচনা করা হয়েছে। পশ্চিবঙ্গের বামফ্রন্ট গর্ভমেন্ট এই “অলচিকি” বর্ণমালাকে সাঁওতালী ভাষার বর্ণমালা বলে স্বীকৃতিও দিয়েছে।।

তাদের সমাজ ব্যবস্থা, রীতি রেওয়াজ অ-সাঁওতাল বাঙালী বা বিহারীদের সমাজ ব্যবস্থা থেকে অনেক বিষয়ে ভিন্ন। তাদের মধ্যে জাতিভেদ নাই। তামাম সাঁওতাল উপজাতির মধ্যে সাতটি গণ বা গোষ্ঠী আছে, সামাজিক দিক দিয়ে তারা সকলই সমান। প্রত্যেকটি গোষ্ঠীর নিজস্ব নাম বা পদবী আছে। পদবীগুলি এই কাসদা, মুর্মু, সরন (সরেন), হাসদি (হাঁসদা), মারুডি (মারডি), কেছু (কিন্তু), ও টাডু (টুডু)। অন্য মতে পদবীগুলি এইঃ জ্যেষ্ঠ থেকে কনিষ্ঠ হাঁসদা, মুর্মু, কিসকু, হেমব্রম, মারডি, সরেন ও টুডু। মারডি বা মারানডি মারডিরই ভিন্ন রূপ। মারাং বুরু (বৃহৎ পর্বত) তাদের সকলের জাতীয় দেবতা। শিবকেও অনেকে দেবতা বলে মানে।

সাঁওতাল জাতির উৎপত্তি সম্বন্ধে নানারকম প্রবাদ ও কাহিনী প্রচলিত আছে। মারাং বুরুর ইচ্ছা অনুসারে এই জাতির আদি পিতা ও মাতার সাত পুত্র ও সাত কন্যা হতে এই সাত গ্লণ বা গোষ্ঠীর উৎপত্তি হয়। প্রথমে তারা

সকলেই ছিল হিহিড়ি পিপিড়ি-তে। ক্রমে সেখানে সকলের স্থান সংকুলান না হওয়ায় তারা চাইচম্পায় চলে যায়। পরে যায় সিলদায়, সেখান থেকে সিকারে, সেখান থেকে ছোট নাগপুরে, তারপর উত্তরে ওসিরে পর্যন্ত। এইভাবে এক অঞ্চল ছেড়ে অন্য অঞ্চলে যাওয়ার কারণ সম্ভবত এই ছিল যে তারা চাষের জন্য জমি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেত না এবং জঙ্গলে পাহাড়েও তাদের জন্য যথেষ্ট খাদ্য সংস্থান হতো না।

সপ্তদশ শতক নাগাদ তারা বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলায় ঢোকে।

সেখানে জমির ষোল আনা মালিক না হওয়ায় তাদের খাজনা দিতে হতো এবং মোড়লের মারফত এজমালিতে সে খাজনা দিত।

দামনে কোহ এলাকায়

—————————–

(চলবে)

সংগ্রহ ও সম্পাদনা :

হাফিজ সরকার।

লেখক, কলামিস্ট

সাবেক ছাত্রনেতা ও

বামপন্থী রাজনীতিবিদ

 

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট